‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের আওতায় এক জন মহিলার অ্যাকাউন্টে এক মাসে অনেকবার আর্থিক সহায়তা পৌঁছচ্ছে বলে খবর পেয়েছে রাজ্য। প্রকল্পের ফর্ম যখন জমা পড়েছে, তখন এতটা খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। এখন একের পর এক ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আর্থিক সহায়তা পাঠানোর তালিকায় একই মহিলার নাম একাধিক বারও উল্লেখ রয়েছে। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও একই। সেই উপভোক্তারা প্রতি মাসে একাধিক বার টাকা হাতে পেয়েছেন।
এমনকি যারা এই প্রকল্পের টাকা পাওয়ার যোগ্য নয় তারাও মাসের পর মাস টাকা পেয়েছে, আবার যাদের মাসে ৫০০ টাকা পাওয়ার কথা ছিল তারা ১০০০ টাকা করে পেয়েছে।
এমনিতেই রাজ্যের কোষাগারের উপরে এখন প্রবল চাপ। এই অবস্থায় দেখা গিয়েছে, নির্ধারিত বরাদ্দের বেশি অর্থ পৌঁছচ্ছে উপভোক্তার হাতে! এই পরিস্থিতিতে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-কে আতস কাচের তলায় আনতে বাধ্য হল রাজ্য সরকার। সব জেলা প্রশাসনকে এখন সরকার নির্দেশ দিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে ওই প্রকল্পের তথ্যভান্ডারকে ত্রুটিমুক্ত করতেই হবে। ‘জলে’ যাওয়া টাকাও কোষাগারে ফেরত আনতে হবে দ্রুত। সরকারের নির্দেশ, পুনরায় চালাতে হবে চিহ্নিত উপভোক্তাদের যাচাই প্রক্রিয়া। একমাত্র ন্যায্য উপভোক্তাই তথ্যভান্ডারে জায়গা পাবেন। অন্যথায় কাটা যাবে নাম।
এই যাচাই প্রক্রিয়া এবং বৈধ উপভোক্তার নাম নথিভুক্ত হওয়ার কাজ চলাকালীন সংশ্লিষ্টদের আর্থিক সুবিধা দান বন্ধ থাকবে। বাকি উপভোক্তারা যেমন টাকা পাচ্ছিলেন তেমনই পাবেন। গরমিলের কারণে, এত দিন ধরে অ্যাকাউন্টগুলিতে যে অতিরিক্ত অর্থ পাঠানো হয়েছে, ‘ট্রেজ়ারি চালান’-এর মাধ্যমে তা ফেরত এনে প্রকল্পের মূল খাতে জমা করতে হবে।
তো কোন মহিলাদের অ্যাকাউন্ট থেকে আবার টাকা ফেরত নেওয়া হবে চলুন একনজরে দেখে নিই।
কোন মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা ফেরত দিতে হবে?
- একাধিক উপভোক্তার টাকা একটিমাত্র ব্যাংক একাউন্টে ঢুকেছে সেই ক্ষেত্রে সেইসব মহিলাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ফেরত নেওয়া হবে।
- একটি একাউন্টে নির্দিষ্ট হিসাবের থেকে বেশি টাকা ঢুকেছে সেই ক্ষেত্রে সেই একাউন্টটি থেকে টাকা ফেরত নেওয়া হবে।
- যেসকল মহিলারা নিজের কাস্ট সার্টিফিকেট না দিয়ে অন্যের SC/ST সার্টিফিকেট দিয়েছেন এবং ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১০০০ টাকা করে পাচ্ছেন তাদের কাছ থেকেও টাকা ফেরত নেওয়া হবে।
- অনেক ক্ষেত্রে জেনারেল এবং ওবিসি কাস্ট এর মহিলারাও SC/ST কাস্টের মহিলাদের মতো মাসে ১০০০ টাকা করে পেয়ে গিয়েছেন তাদের অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা নেওয়া হবে।
- আধার কার্ডে এক নাম অর্থাৎ আবেদনকারীর এক নাম এবং ব্যাংক একাউন্টে আর এক নাম থাকলে , সেই সকল মহিলাদের অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা ফেরত নেওয়া হবে।
- যাদের বয়স ২৫ থেকে ৬০ মধ্যে নেই কিন্তু তবুও ভুল বশত বর্তমানে টাকা পাচ্ছেন তাদের অ্যাকাউন্ট থেকেও সরকার টাকা ফেরত নিয়ে নেবে।
- যে সকল মহিলারা অন্য ভাতার টাকা পেয়ে আসছেন অথচ লক্ষীর ভান্ডার এর টাকাও পাচ্ছিলেন তাদের অ্যাকাউন্টে যত টাকা দেওয়া হয়েছে তাও ফেরত নেওয়া হবে।
এক কথায় যাদের আবেদনপত্র ত্রুটি যুক্ত বা যারা এই প্রকল্পের টাকা পাওয়ার যোগ্য নয় তাদের অ্যাকাউন্টে এই প্রকল্পের মারফত যত টাকা দেওয়া হয়েছে তা ফেরত নেওয়া হবে। এরপর আবার যাচাই করার পর যারা আসলে এই প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য তাদেরকেই আবার সঠিক পরিমাণে টাকা পাঠানো হবে।